গত রামনবমীর দিন পশ্চিবঙ্গের বীরভূম জেলার রাজনগর গ্রামে হঠাৎই তিনজন যুবক যেকোনো দাম দিয়ে মৃত গরুর মাথা কিনতে এলে স্থানীয় মানুষের ভয় এবং সন্দেহের উদ্রেক হয়। আমরা এ সংক্রান্ত খবরটি, ছবি এবং ভিডিওটি পাই স্থানীয় সাংবাদিক খান সাহিল মহজরের কাছ থেকে। প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গ কেরালা, এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ সহ সেই অল্প কিছু রাজ্যের মধ্যে পড়ে, যেখানে গো-হত্যা আইনী ভাবে অনুমোদিত এবং রাজ্যের নিজস্ব আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মধ্যে গরুর মাথা মাথা কিনতে এসে লোকজনের সন্দেহের কবলে পড়ে ৩ যুবক। এলাকাবাসীর মতে, রামনবমীর দিনে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তাঁরা গরুর মাথাগুলি কিনেছে।
জানা যায়, গাংমুড়ি গ্রামের সুফল দাস নামে এক যুবক সাথে আরও দুজনকে নিয়ে রাজনগরের মাংসের বাজারে আসেন। বাকী দুজনের মধ্যে একজনের বাড়ি তাঁতিপাড়া অন্যজন বসবাসের একজন সঠিক জায়গা বলেনি। প্রশ্নের উত্তরে কখনও বলেছে লোকপুর কখনও বলেছে ঝাড়খণ্ডের কূলডাঙ্গা। তারা এসে কানসহ পাঁচটি গরুর মাথা কিনতে চায়। এক কসাইকে তারা বলে, আমাদেরকে পাঁচটি মাথা লাগবে, দাম যা চাইবেন, তাই দেবো। খবর অনুযায়ী সেই স্থানীয় কসাই প্রায় তিনগুণ দাম চান। কোনো দরদাম ছাড়াই যুবকরা তাতেই রাজি হয়ে যায়। কসাইয়ের কাছে পাঁচটি মাথা না থাকায় তিনি তিনটি মাথা বিক্রি করবেন বলেন। যুবকরা তাতেও রাজি হয়।
এরপর মাথা কিনে সেগুলি বস্তায় ঢোকানোর সময় স্থানীয় এক অভিজ্ঞ কসাইয়ের সন্দেহ হয়। সুফল দাস গরুর চামড়ার ব্যবসা করেন এবং ওই বাজারে চেনা মুখ। নিজের ব্যবসার জন্য বাজারে তিনি গরুর চামড়া কিনতে আসতেন। কিন্তু চামড়ার বদলে সেদিন হঠাৎ গরুর মাথা কিনতে আসাই সন্দেহের কারণ। যুবকদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। কসাইরা বাকি দুজনের নাম ও ঠিকানা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গরুর মাথা কেনার কারণ জানতে চাওয়ায় সুফল দাস এক অদ্ভুত কারণ শোনান। তিনি বলেন, তাঁদের গ্রামের একজন পাগল হয়ে গিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারবাবু গরুর মাথা নিয়ে গবেষণা করবেন তারপর তাঁর চিকিৎসা করবেন!এটা শুনে কসাইরা আবার প্রশ্ন করে, গবেষণার জন্য তাহলে একটি বা দুটি মাথার প্রয়োজন। পাঁচটি মাথা কি কারনে? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তারা দিতে পারেনি। এই জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগে একজন পালিয়ে যায়। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কসাইরা ছেড়ে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাজনগর থানায় বিষয়টি বলা হয়। যুবকদের ছবিও দেওয়া হয় থানায়। অভিযোগকারীরা বিষয়টির তদন্তের দাবী জানায়। যুবকদের গরুর মাথা কেনার উদ্দেশ্য কি ছিল, তা জানার আবেদন জানায় থানায়। থানার ওসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এদিকে এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীদের মতে, মাথাগুলি কোনো স্পর্শকাতর এলাকায় ফেলে দিয়ে গন্ডগোল পাকানোই ছিল উদ্দেশ্য। ওই যুবকদের ছেড়ে দেওয়া ভুল হয়েছে। বরং তাদেরকে থানায় নিয়ে আসা উচিত ছিল।
অল্ট নিউজের পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে বীরভূমের এস পি এন সুধীর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টির পিছনে কোনো হিন্দু-মুসলিম সংক্রান্ত উদ্দেশ্যের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন পূজা করার জন্যই নাকি যুবকরা গরুর মাথা কিনতে এসেছিল। তবে কোন পুজোতে গরুর মাথা লাগে তা জানা যায়নি।
Add Comment